যদি কেউ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে নামায পড়তে অক্ষম হয় তবে অন্য সময়ে নামায পড়াকে কাজা নামাজ বলে। সুন্নতের পাশাপাশি ফজরের কাজা নামাজ দুপুরের আগে পড়া উত্তম। দৈনিক পাঁচটির বেশি নামায পড়লে, পূর্বের নামায পড়ুন এবং বর্তমান নামায পূর্ণ করুন যদি আপনি বর্তমান নামায বাদ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তিত থাকেন। বাকিটা পরে পড়ে শেষ করব। যদি পাঁচটির কম নামায থাকে তবে বর্তমান নামাযের আগে বলতে হবে। আজকে আমরা কাজা নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানবো।
কাজা নামাযের নিয়ম
কাজা নামায হলো এমন নামায যা নির্ধারিত সময়ে আদায় করা সম্ভব হয়নি। এই নামায পরবর্তীতে আদায় করা আবশ্যক। কাজা নামাযের নিয়ম নিম্নরূপ:
১. কাজা নামায আদায় করার সময়, নির্দিষ্ট নামাযের সূরা কেরাত পাঠ করতে হবে।
২. যদি কাজা নামায সফরের সময় আদায় করা হয়, তাহলে সফরের বিধান অনুসরণ করতে হবে।
৩. যদি কাজা নামায ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি আদায় করতে হবে।
কাজা নামায আদায় করার সময়, যে সময়ের নামায কাজা করা হচ্ছে, সে সময়ের নামাযের নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি সকালের নামায কাজা হয়, তাহলে সকালের নামাযের নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
কাজা নামাজের নিয়ত আরবি
কাজা নামাজের নিয়ত আরবিতে দেওয়া হলোঃ
” নাওয়াইতু আন আকুদিয়া লিল্লাহি তাআলা রাক’আতাই সালাতি ফাওতিল ফাজরি ফারদাল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার “
কাজা নামাজ কয় প্রকার?
কাজা নামাজ দুই প্রকার। যথা:
- ফরজ কাজা নামাজ: যে সকল ফরজ নামাজ ছুটে গেছে সেগুলোর কাজা আদায় করা আবশ্যক।
- ওয়াজিব কাজা নামাজ: যে সকল ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেছে সেগুলোর কাজা আদায় করাও আবশ্যক।
ফরজ কাজা নামাজের ক্ষেত্রে, যদি নামাজের সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরবর্তীতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নামাজ আদায় করতে হবে। আর যদি নামাজের সময়ের পর নামাজ আদায় করা হয়, তাহলে তা তায়াম্মুম বা পানি দ্বারা ওজু করে আদায় করতে হবে।
ওয়াজিব কাজা নামাজের ক্ষেত্রে, যদি নামাজের সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরবর্তীতে নামাজ আদায় করা যাবে। তবে নামাজের সময়ের পর নামাজ আদায় করা হলে তা তায়াম্মুম বা পানি দ্বারা ওজু করে আদায় করতে হবে না।
কাজা নামাজের মাসয়ালা
কাজা নামাজ হল এমন নামাজ যা কোন কারণে সময়মতো আদায় করা হয়নি। কাজা নামাজ আদায় করা ফরজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ভুলে নামাজ ছেড়ে দেয় সে যেন তাড়াতাড়ি আদায় করে।” (বুখারী, মুসলিম)
কাজা নামাজ আদায় করার কিছু মাসায়েল হল:
- কাজা নামাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করা উত্তম।
- যদি কোন কারণে কাজা নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করা উচিত।
- কাজা নামাজ আদায় করার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। যেকোনো সময় আদায় করা যায়।
- কাজা নামাজ আদায় করার জন্য জুমা, ঈদ, তারাবীহ, এবং অন্যান্য সুন্নাত নামাজের কাজা আদায় করতে হয় না।
- কাজা নামাজ আদায় করার জন্য কাফফারা দিতে হয় না।
কাজা নামাজের দলীল
কাজা নামাজের দলীল নিম্নরূপ:
- কুরআনুল কারিমে:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ।” (সূরা নিসা: ১০৩)
এই আয়াতে নামাজের নির্ধারিত সময়ের কথা বলা হয়েছে। তাই, সেই নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক। যদি কোনো কারণে কোনো নামাজ আদায় করা না হয়, তাহলে সে নামাজের কাজা আদায় করতে হবে।
- হাদিসে নববীতে:
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি অনিচ্ছায় নামাজ ছেড়ে দেয়, সে যেন তা আদায় করে। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, সে যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং তা আদায় করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
কাজা নামাজ সম্পর্কিত হাদীস
কাজা নামাজ হলো এমন নামাজ যা তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা হয়নি। কোনো কারণে যদি কেউ নামাজ আদায় করতে না পারে, তাহলে তাকে তা পরে আদায় করতে হবে। কাজা নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। নামাজের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করে। কাজা নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তা’আলা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন।
কাজা নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো নামাজ ভুলে যায় বা ঘুমের কারণে আদায় করতে পারে না, সে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা আদায় করে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘যখন তোমরা নামাজ ছেড়ে দাও, তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা আদায় করো।'” (বুখারি ও মুসলিম)
কাজা নামাজ আদায় করার নিয়ম
কাজা নামাজ হলো নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় না করার কারণে পরে আদায় করা নামাজ। ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে, সে নামাজের কাজা আদায় করা আবশ্যক। সুন্নত কিংবা নফল নামাজ আদায় করা না গেলে, সেটার কাজা আদায় করতে হয় না।
কাজা নামাজ আদায় করার নিয়ম নিম্নরূপ:
১. নিয়ত করা: নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে নিয়ত করা জরুরি। নিয়তে শুধুমাত্র নামাজের নাম এবং কত রাকাত পড়ব সেটা উল্লেখ করা।
২. তাকবির তাহরিমা বলা: নামাজ শুরু করার জন্য “আল্লাহু আকবার” বলে তাকবির তাহরিমা বলা।
৩. সূরা ফাতিহা পড়া: সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ।
৪. সূরা মিলানো: ফরজ নামাজে সূরা ফাতিহার পর আরেকটি সূরা মিলানো জরুরি।
৫. রুকু করা: নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু করা।
৬. সিজদা করা: রুকু থেকে উঠে দুই সিজদা করা।
৭. তাশাহহুদ পড়া: নামাজের দ্বিতীয় সিজদার পর তাশাহহুদ পড়া।
৮. তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো: তাশাহহুদ শেষে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো।
৯. সূরা ফাতিহা পড়া: তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া।
১০. সূরা মিলানো: তৃতীয় রাকাতেও সূরা ফাতিহার পর আরেকটি সূরা মিলানো জরুরি।
১১. রুকু করা: তৃতীয় রাকাতেও রুকু করা।
১২. সিজদা করা: রুকু থেকে উঠে দুই সিজদা করা।
১৩. সালাম ফিরান: নামাজ শেষে ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরান।
ভ্রমণের সময়ের কাজা
- ভ্রমণের আগেই কাজা নামাজের তালিকা করে নিন। এতে করে ভ্রমণের সময় মনে রাখা সহজ হবে।
- ভ্রমণের সময় নামাজের সময়সূচী সঙ্গে রাখুন।
- ভ্রমণের সময় নামাজের জন্য একটি ছোট্ট টয়লেট্রিজ ব্যাগ রাখুন, যাতে টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, পানি, ওজু করার জন্য জল, ওজু করার কাপড় ইত্যাদি থাকতে পারে।
- ভ্রমণের সময় নামাজ আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বের করে রাখুন।
কাজা নামাজের নিয়ত ছবি
আরো পড়ুনঃ ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ