রক্ত আমাশয় হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে অন্ত্র থেকে রক্তপাত হয়। এর ফলে পায়খানায় রক্ত দেখা যায়। রক্ত আমাশয়ের বেশ কয়েকটি কারণ হতে পারে। আজকে আমরা রক্ত আমাশয়ের ঔষধের নাম সম্পর্কে জানবো। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারন নিচে বলা হলোঃ
- জীবাণু সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা পরজীবী দ্বারা সংক্রমণ হলে রক্ত আমাশয় হতে পারে।
- খাদ্যে বিষক্রিয়া: দূষিত খাবার বা পানীয় খেলে রক্ত আমাশয় হতে পারে।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্ত আমাশয় হতে পারে।
- অন্ত্রের রোগ: অন্ত্রের রোগ, যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোহনস রোগের কারণেও রক্ত আমাশয় হতে পারে।
রক্ত আমাশয়ের ঔষধের নাম

আপনার যদি রক্তের আমাশয় থাকে, তাহলে আপনাকে Pivmecillinam যুক্ত ওষুধ সেবন করা উচিত। ব্লাড ডিসেন্ট্রির পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রচুর পানি পান করুন এবং ওরস্যালাইন, ডাবের পানি, ধানক্ষেত এবং চিড়ার পানি ব্যবহার করুন। আমাশয় চিকিত্সা এবং রক্তপাত বন্ধ করতে, Alexid200 mg ট্যাবলেট দিনে তিনবার তিন দিনের জন্য খান। Aristopharma company Ltd একটি অত্যন্ত কার্যকর আমাশয়ের ওষুধ তৈরি করে। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম 15.00 টাকা।
আপনি যদি অতিরিক্ত সমস্যার সম্মুখীন হন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার পরামর্শ নিন।
আমাশয়ের প্রকারভেদ
আমাশয় দুই ধরনের হয়ে থাকে:
- অ্যামিবাঘটিত আমাশয় এবং
- দণ্ড-ব্যাকটেরিয়াঘটিত (ব্যাসিলারি) আমাশয়।
রক্ত আমাশয় রোগ হওয়ার কারণ
রক্ত আমাশয় হল এক ধরনের ডায়রিয়া যাতে মলত্যাগের সাথে রক্ত মিশে যায়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: রক্ত আমাশয়ের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, বিশেষ করে Escherichia coli (E. coli) নামক ব্যাকটেরিয়া। E. coli O157: H7 নামক একটি বিশেষ ধরনের E. coli রক্ত আমাশয়ের কারণ হতে পারে যা খুব গুরুতর হতে পারে।
- ভাইরাস সংক্রমণ: ভাইরাস সংক্রমণ, যেমন rotavirus, রক্ত আমাশয়ের আরেকটি সাধারণ কারণ।
- পরজীবী সংক্রমণ: পরজীবী সংক্রমণ, যেমন Giardia lamblia, রক্ত আমাশয়ের আরেকটি কারণ হতে পারে।
- ওষুধের প্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, রক্ত আমাশয়ের কারণ হতে পারে।
রক্ত আমাশয় রোগের লক্ষণ
রক্ত আমাশয়ের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- তরল বা শ্লেষ্মাযুক্ত ডায়রিয়া
- পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প
- মলে রক্ত বা শ্লেষ্মা
- পেট ফাঁপা
- বমি
- মাথা ঘোরা
- দুর্বলতা
- জ্বর
রক্ত আমাশয়ের কয়েকটি গুরুতর জটিলতা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ডিহাইড্রেশন
- শক
- রক্তশূন্যতা
- অন্ত্রের ক্ষতি
- অন্ত্রের বিছিন্নতা
- মৃত্যু
রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায়
রক্ত আমাশয়ের নিরাময়ের জন্য নিম্নলিখিতগুলি করা যেতে পারে:
- পর্যাপ্ত তরল পান করা। রক্ত আমাশয়ের কারণে পানিশূন্যতা হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত তরল পান করা গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কার পানি, ফলের রস, স্পোর্টস পানীয় বা ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণ পান করা যেতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা। যদি রক্ত আমাশয় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা প্রয়োজন হতে পারে।
- অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ গ্রহণ করা। যদি রক্ত আমাশয় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা প্রয়োজন হতে পারে।
- প্রদাহরোধী ওষুধ গ্রহণ করা। প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের কারণে রক্ত আমাশয় হলে প্রদাহরোধী ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
- অস্ত্রোপচার করা। ডাইভার্টিকুলোসিসের কারণে রক্ত আমাশয় হলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
রক্ত আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম
আপনি আপনার ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়। এখানে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ রয়েছে যা সাধারণত ডাক্তারদের দ্বারা নির্ধারিত হয়:
- ট্যাবলেট Zox 500 Mg
- ট্যাবলেট Flagyl 400 Mg
- ডক্সিকাপ ক্যাপসুল
বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় ঔষধ নাম
আমাশয়ের জন্য অনেক ধরনের ওষুধ আছে। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য কোন ওষুধটি সবচেয়ে ভালো তা নির্ধারণ করার জন্য আমি সাজেস্ট করবো আপনি একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুণ।
জুন ও জুলাই মাসে প্রচণ্ড গরমের কারণে বাচ্চাদের এ রোগ বেশি হয়। বাচ্চাদের ডায়রিয়া সাধারণত 10 থেকে 12 দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং এই সময়ে কোনও বিশেষ চিকিত্সার প্রয়োজন হয় না। অন্য কথায়, এই সাধারণ ডায়রিয়ার চিকিত্সার মতো মানক চিকিত্সা অনুসরণ করে, বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় সাধারণত 10 দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
যাইহোক, যদি বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় 10 দিনের মধ্যে সুস্থ না হয়, তবে শিশুদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত আমাশয়ের ওষুধ দিতে হবে।
রক্ত আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত
রক্ত আমাশয় হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। তাই এই অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়া উচিত। যেমন:
- স্যালাইন
- ডাবের পানি
- ফলের রস
- জুস
- চা
এছাড়াও, এই অবস্থায় খাওয়া উচিত এমন কিছু খাবার হল:
- পাতলা চালের ভাত
- মুরগির মাংসের স্যুপ
- ডিমের স্যুপ
- রুটি
- পাউরুটি
- ফল
- সবজি
আমাশয় রোগের এন্টিবায়োটিক
উপরে উল্লিখিত তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ রয়েছে যা সাধারণত ডাক্তারদের দ্বারা নির্ধারিত হয় ট্যাবলেট Zox 500 Mg, ট্যাবলেট Flagyl 400 Mg, ডক্সিকাপ ক্যাপসুল।
আমাশয় হলে করণীয়
আমাশয় হল একটি সাধারণ ডায়রিয়াজনিত রোগ। এটি মূলত অন্ত্রের সংক্রমণ দ্বারা হয়। আমাশয় হলে সাধারণত পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, অস্বস্তি, বমি, জ্বর এবং দুর্বলতা দেখা দেয়।
আমাশয় হলে নিম্নলিখিত করণীয়:
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন, বিশেষ করে জল, ডাবের পানি, ফলের রস বা ইলেক্ট্রোলাইট সমাধান। এটি শরীর থেকে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট হারানো রোধে সাহায্য করবে।
- পাতলা পায়খানা হলে পাতলা পায়খানা রোধক ওষুধ সেবন করুন। তবে, এ ধরনের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়।
- বমি হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করুন। এটি সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করবে।
- বিশ্রাম নিন এবং শরীরকে সুস্থ হতে দিন।
আমাশয়ের উপসর্গগুলি সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে চলে যায়। তবে, যদি উপসর্গগুলি কয়েক দিনের মধ্যে না কমে, বা যদি আপনার জ্বর 102 ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, বা আপনি বমি করতে থাকেন, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
আমাশয় প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
- পরিষ্কার এবং বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
- বাইরে খাবার খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- খাবার এবং পানীয় খাওয়ার আগে এবং পরে আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন।
আমাশয় একটি গুরুতর রোগ নয়, তবে এটি গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই আমাশয় হলে যথাযথ চিকিৎসা এবং যত্ন নেওয়া জরুরি।
পুরাতন আমাশয় রোগের ঔষধ
পুরাতন আমাশয়ের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- অ্যামিবানাশক ওষুধ: এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক অ্যামিবা দ্বারা সৃষ্ট আমাশয়ের চিকিৎসায় অ্যামিবানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলো অ্যামিবাকে মেরে ফেলে এবং আমাশয়ের লক্ষণগুলি উপশম করে। অ্যামিবানাশক ওষুধের মধ্যে রয়েছে মেট্রোনিডাজল, টেট্রামাইসিন, এবং ক্লোরোকুইন।
- অ্যান্টিবায়োটিক: শিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট আমাশয়ের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলো ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং আমাশয়ের লক্ষণগুলি উপশম করে। অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, এবং এরিথ্রোমাইসিন।
- পানিশূন্যতা প্রতিরোধী ওষুধ: আমাশয়ের কারণে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যায়। এতে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। পানিশূন্যতা প্রতিরোধী ওষুধ, যেমন প্লাজমা সালাইন, পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
পুরাতন আমাশয়ের চিকিৎসায় সাধারণত একাধিক ধরনের ওষুধের সমন্বয় ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসার সময়কাল রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে।
আমাশয় রোগের আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম
আমাশয় রোগের আয়ুর্বেদিক ঔষধের মধ্যে রয়েছে:
- হরিদ্রা (Curcuma longa): হলুদ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা আমাশয়ের কারণ হতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়া এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- আমলকি (Emblica officinalis): আমলকি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা আমাশয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
- ত্রিফলা (Triphala): ত্রিফলা হল তিনটি ফলের একটি মিশ্রণ – আমেলা (Emblica officinalis), হরিদ্রা (Curcuma longa) এবং বিবিতা (Terminalia bellirica)। এটি একটি শক্তিশালী টনিক যা আমাশয়ের কারণ হতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়া এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- শতাবর্ষী (Centella asiatica): শতাবর্ষী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা আমাশয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
- বটল (Boswellia serrata): বটল একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা আমাশয়ের কারণে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এই ঔষধগুলি সাধারণত পাউডার, ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। সেবন করার আগে একজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা