প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদেরকে ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী সেই সম্পর্কে জানাবো। ওযু হলো শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ পানি দিয়ে ধোয়ার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করার একটি ইসলামি প্রক্রিয়া। ওযু নামাজ, তাহাজ্জুদ, কুরআন তিলাওয়াত, কাবা শরীফ তাওয়াফ, জিয়ারত ইত্যাদি ইসলামি ইবাদতের জন্য একটি পূর্বশর্ত। তো চলুন ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী তা জেনে নেওয়া যাক।
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী? ওযুর ফরজ চারটি। যথা:
- মুখমণ্ডল ধোয়া। মুখমণ্ডলের সংজ্ঞা হলো কপাল থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং ডান ও বাম কানের লতি পর্যন্ত।
- দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া।
- মাথা মাসেহ করা। মাথা মাসেহ করার জন্য মাথার সামনের অংশ থেকে শুরু করে পিছনের দিকে একবার হাত বুলিয়ে নিতে হবে।
- পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়া।
ওযুর ফরজগুলো যথাযথভাবে আদায় না করলে ওযু হবে না।
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী? ওযুর ফরজগুলোর বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ:
মুখমণ্ডল ধোয়া
মুখমণ্ডল ধোয়ার জন্য কপাল থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং ডান ও বাম কানের লতি পর্যন্ত পানি দিয়ে ধোয়া লাগবে। মাথার চুল, দাড়ি, গোঁফ এবং মুখের লোম যদি পানি দিয়ে ভিজে যায় তাহলে ওযু হয়ে যাবে।
দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া
দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়ার জন্য হাতের তালু, আঙ্গুলের ফাঁক, কনুই এবং কনুইর ভাঁজ পর্যন্ত পানি দিয়ে ধোয়া লাগবে।
মাথা মাসেহ করা
মাথা মাসেহ করার জন্য মাথার সামনের অংশ থেকে শুরু করে পিছনের দিকে একবার হাত বুলিয়ে নিতে হবে। মাথার সব চুল মাসেহ করতে হবে। তবে, মাথার চুল যদি খুব লম্বা হয় তাহলে মাথার সব চুল মাসেহ করা সম্ভব না হলে মাথার মাঝখানের চুল মাসেহ করলেই হবে।
পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়া
পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়ার জন্য পায়ের আঙ্গুল, পায়ের পাতা, পায়ের গোড়ালি এবং পায়ের গোড়ালির ভাঁজ পর্যন্ত পানি দিয়ে ধোয়া লাগবে।
ওযুর ফরজগুলোর সঠিক নিয়ম জানার জন্য কোন বিজ্ঞ আলেম বা মুফতি সাহেবের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
ওযুর ফরজ কয়টি ভিডিও
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী ভিডিও দেখতে চাইলে আপনি YouTube-এ “ওযুর ফরজ” লিখে সার্চ করতে পারেন। অনেকগুলো ভিডিও পাবেন।
এখানে কয়েকটি ভিডিওর লিঙ্ক দেওয়া হলো:
- ওযুর ফরজ | How to Perform Wudu in Bengali
- ওযুর ফরজ | ওযুর নিয়ম | Wudu in Bengali
- ওযুর ফরজ | ওযুর নিয়ম | Wudu in Bengali (2023)
আপনার যে ভিডিওটি ভালো লাগে সেটি দেখতে পারেন।
ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি বিস্তারিত
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী বিস্তারিত আলোচনা জানতে চান? ওযুর ফরজগুলোর বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ:
মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখমণ্ডল ধোয়ার সময় নাক ও মুখের ভেতরের অংশ ভালোভাবে ধোয়া জরুরি। নাকের ভেতরের অংশে পানি পৌঁছানোর জন্য নাক দিয়ে পানি টেনে নিয়ে মুখ দিয়ে বের করতে হবে। মুখের ভেতরের অংশে পানি পৌঁছানোর জন্য জিহ্বা দিয়ে দাঁতগুলোকে ভালোভাবে ঘষতে হবে।
দু হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দু হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়ার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো ভালোভাবে ঘষতে হবে। আঙ্গুলের ফাঁকে পানি পৌঁছানোর জন্য আঙ্গুলগুলোকে একসাথে করে ঘষতে হবে।
মাথা মাসেহ করা: মাথা মাসেহ করার সময় মাথার চুলের গোড়া থেকে শুরু করে কপালের লম্বা অংশ পর্যন্ত হাত বুলাতে হবে। মাথার সব চুল মাসেহ করার দরকার নেই। মাথার এক তৃতীয়াংশ মাসেহ করলেই হবে।
পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়া: পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়ার সময় পায়ের আঙ্গুলগুলো ভালোভাবে ঘষতে হবে। আঙ্গুলের ফাঁকে পানি পৌঁছানোর জন্য আঙ্গুলগুলোকে একসাথে করে ঘষতে হবে।
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী? এই ওযুর ফরজগুলোর মধ্যে কোনও একটি ফরজ ভুলে গেলে বা নিয়ম অনুযায়ী না করলে ওযু হবে না। এক্ষেত্রে আবার ওযু করতে হবে।
ওযুর ফরজ কয়টি গোসলের ফরজ কয়টি
ওযুর ফরজ চারটি:
- মুখমণ্ডল ধোয়া।
- দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া।
- মাথা মাসেহ করা।
- পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধোয়া।
গোসলের ফরজ চারটি:
- পুরো শরীরে পানি প্রবাহ করানো।
- প্রথমে মাথা ধোয়া।
- সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহ করানো।
- গোসলের উদ্দেশ্য নিয়ে গোসল করা।
ওযুর ফরজগুলো হলো:
- ওয়াযন। অর্থাৎ, মুখমণ্ডল, দুই হাত কনুই পর্যন্ত, দুই পা টাখনু পর্যন্ত এবং মাথায় তিনবার পানি ঢালার আগে নিয়ত করা।
- মুখমণ্ডল ধোয়া। অর্থাৎ, মুখমণ্ডলের সবটুকু অংশ পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া।
- দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া। অর্থাৎ, হাতের কব্জি থেকে আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া।
- মাথায় তিনবার পানি ঢাল। অর্থাৎ, মাথার সবটুকু অংশে তিনবার পানি ঢেলে দেওয়া।
গোসলের ফরজগুলো হলো:
- পুরো শরীরে পানি প্রবাহ করানো। অর্থাৎ, শরীরের সবটুকু অংশ পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া।
- প্রথমে মাথা ধোয়া। অর্থাৎ, মাথার সবটুকু অংশে পানি ঢেলে দেওয়া।
- সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহ করানো। অর্থাৎ, শরীরের সবটুকু অংশে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া।
- গোসলের উদ্দেশ্য নিয়ে গোসল করা। অর্থাৎ, গোসলের উদ্দেশ্য নিয়ে নিয়ত করা।
ওযুর ফরজগুলো না মানলে ওযু হবে না। গোসলের ফরজগুলো না মানলে গোসল হবে না।
ওযু করার ফজিলত
ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী? তা তো জানলেন। এখন চলুন ওযু করার ফজিলত জেনে নেই। ওযু করার অনেক ফজিলত রয়েছে। কুরআন ও হাদিসে ওযুর ফজিলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি ফজিলত উল্লেখ করা হল:
- ওযু হল নামাজের পূর্বশর্ত। নামাজ ছাড়া ইসলামের কোন ইবাদতই সম্পূর্ণ হয় না। তাই ওযু করার মাধ্যমে আমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হই।
- ওযু আমাদের শরীরকে পবিত্র করে। ওযুর মাধ্যমে আমাদের শরীরের সমস্ত নোংরা দূর হয়ে যায়।
- ওযু আমাদের মনকে প্রশান্ত করে। ওযুর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি।
- ওযু আমাদের পাপ থেকে মাফ লাভের সুযোগ করে দেয়। ওযু করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
ওযুর ফজিলত সম্পর্কে কিছু হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হল:
- হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওযু করে, তার সমস্ত গুনাহ হাত-পায়ের নখের মাঝ থেকে বের হয়ে যায়।” (বুখারি ও মুসলিম)
- হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “ওযু হল নামাজের চাবি।” (তিরমিজি)
- হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওযু করে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়।” (মুসনাদে আহমদ)
ওযু করার ফজিলত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ওযু আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন ওযু করে নামাজ পড়া।
উপসংহার
ওযু (আরবি: وضوء) হল ইসলামের একটি ধর্মীয় বিধান, যাতে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ পানি দিয়ে ধোয়া হয়। ওযু নামাজের পূর্বশর্ত, এবং এছাড়াও অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্যও ওযু করা প্রয়োজন। উপরের পোস্টটি থেকে আপনারা ওযুর ফরজ কয়টি ও কী কী তা জেনে গেছেন। আপনাদের আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ আসতাগফিরুল্লাহ অর্থ কি?