ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হাঁসের জাত হলো খাকি ক্যাম্পবেল। এই জাতের হাঁস প্রতি বছর আড়াই থেকে তিনশ ডিম দিতে পারে। জিংডিং এবং ইন্ডিয়ান রানার 250টি পর্যন্ত ডিম পাড়ার ক্ষমতা রাখে।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্য
ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হাঁসের জাত খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস হল একটি মাঝারি আকারের, ডিম পাড়ার জাতের হাঁস। এটি ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে কানাডায় উদ্ভূত হয়েছিল। এটি তার উচ্চ ডিম উৎপাদন, শান্ত স্বভাব এবং সহনশীলতার জন্য পরিচিত।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল:
- মাঝারি আকারের, প্রায় ১.৫ থেকে ২.২ কেজি ওজনের।
- হালকা বাদামী পালক, পুরুষদের গাঢ় বাদামী মাথা, ঘাড়, পিঠ এবং লেজ থাকে।
- বাদামী পা এবং সবুজ রঙের বিল।
- শান্ত স্বভাব এবং সহনশীল।
- উচ্চ ডিম উৎপাদন ক্ষমতা, প্রতি বছর প্রায় ৩০০ ডিম।
- ডিমের রং হালকা সাদা বা সবুজাভ-সাদা।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন কিভাবে করতে হয়?
ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হাঁসের জাত খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। এই হাঁস বছরে ২৫০-৩০০টি ডিম দেয়। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে:
- হাঁসের ঘর: হাঁসের ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে হাঁসরা ঠান্ডা, গরমে এবং বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়। ঘরের মেঝে মাটি বা পাকা হতে পারে। ঘরের উচ্চতা ১৫০ সেমি হওয়া উচিত। ঘরের মধ্যে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
- হাঁসের খাবার: হাঁসকে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। হাঁসের খাবারের মধ্যে ভুট্টা, গম, ধান, খড়, মাছ, মাংসের গুঁড়া, লবণ, ভিটামিন ও মিনারেলস ইত্যাদি থাকতে হবে। হাঁসকে প্রতিদিন ২-৩ বার খাবার দিতে হবে।
- হাঁসের পানি: হাঁসের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হবে। হাঁসের খাবার ও পানি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
- হাঁসের রোগ-বালাই: হাঁসকে নিয়মিত কৃমির ওষুধ ও রোগ প্রতিরোধক টিকা দিতে হবে।
- হাঁসের ডিম সংগ্রহ: হাঁস প্রতিদিন ডিম দেয়। ডিম সংগ্রহ করে তা ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস কত দিনে ডিম দেয়?
ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হাঁসের জাত খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস সাধারণত ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহ বয়সে ডিম দেয়। অর্থাৎ, জন্মের প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস পর। খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস একটি উচ্চ উৎপাদনশীল ডিম-প্রদানকারী জাত, যা প্রতি বছর গড়ে ২৮০ থেকে ৩০০টি ডিম দিতে পারে। এদের ডিম সাদা রঙের এবং ওজন প্রায় ৭০ গ্রাম।
জিনডিং হাঁস পালন কিভাবে করতে হয়?
জিনডিং হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। জিনডিং হাঁস বছরে প্রায় ২৫০-২৭০টি ডিম দেয়। জিনডিং হাঁস পালন করতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:
- ঘর: জিনডিং হাঁসের জন্য ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ বা কাঠের গুঁড়া দিয়ে বিছানা তৈরি করতে হবে। ঘরের আর্দ্রতা ৫০-৬০% এবং তাপমাত্রা ২১-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখতে হবে।
- বাচ্চা: জিনডিং হাঁসের বাচ্চা সাধারণত ২০-২১ দিন বয়সে ব্রুডিং থেকে বের হয়। বাচ্চা সংগ্রহের পর এদেরকে প্রথমে ভিটামিন মিশ্রিত পানি খেতে দিতে হবে। তারপর শুকনো খাবার সামান্য পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩/৪ বার বাচ্চাকে খাবার দিতে হবে এবং প্রতি বাচ্চাকে ৫-১০ গ্রাম করে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে।
- খাদ্য: জিনডিং হাঁসকে সুষম খাবার দিতে হবে। খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকা প্রয়োজন। জিনডিং হাঁসের জন্য তৈরিকৃত খাদ্য ব্যবহার করতে পারেন অথবা নিজেও তৈরি করে নিতে পারেন।
- পানি: জিনডিং হাঁসকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে হবে। হাঁস সাধারণত ভিজা খাবার পছন্দ করে। তাই খাবারে সবসময় পানি মিশিয়ে দিতে হবে।
- রোগ প্রতিরোধ: জিনডিং হাঁসকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে হবে। নিয়মিত হাঁসের ঘর ও পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন। হাঁসকে নিয়মিত টীকা দিতে হবে।
মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের জাত কোনটি?
মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের জাত নিম্নরূপ:
- বেইজিং হাঁস: বেইজিং হাঁস একটি প্রাচীন এবং জনপ্রিয় জাতের হাঁস। এরা আকারে বড় এবং মাংসের পরিমাণ বেশি। বেইজিং হাঁস সাধারণত ৭০-৮০ দিন বয়সে খামার থেকে বিক্রি করা হয়।
- মাস্কোভি হাঁস: মাসকোভি হাঁস একটি শক্তিশালী এবং শীতকালে সহ্য করার ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের হাঁস। এরা আকারে বড় এবং মাংসের পরিমাণ বেশি। মাসকোভি হাঁস সাধারণত ৯০-১০০ দিন বয়সে খামার থেকে বিক্রি করা হয়।
- আইলেসবারি হাঁস: আইলেসবারি হাঁস একটি বড় আকারের জাতের হাঁস। এরা আকারে বড় এবং মাংসের পরিমাণ বেশি। আইলেসবারি হাঁস সাধারণত ৯০-১০০ দিন বয়সে খামার থেকে বিক্রি করা হয়।
- রোয়েন হাঁস: রোয়েন হাঁস একটি বড় আকারের জাতের হাঁস। এরা আকারে বড় এবং মাংসের পরিমাণ বেশি। রোয়েন হাঁস সাধারণত ৯০-১০০ দিন বয়সে খামার থেকে বিক্রি করা হয়।
কোন জাতের হাঁস পালন লাভজনক
হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। হাঁস পালনের উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের হাঁস রয়েছে।
ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হাঁসের জাত
- ইন্ডিয়ান রানার
- খাকি ক্যাম্পবেল
- মাল্টি রেস
- সোনালী
- আইডল
এই জাতের হাঁস বছরে প্রায় ২৫০-৩০০টি ডিম দিতে পারে। এদের ডিম আকারে বড় এবং সুস্বাদু।
মাংস উৎপাদনের জন্য লাভজনক জাতের হাঁস
- বেইজিং
- হংকং
- ইন্ডিয়ান মুক্তা
- সিলভার পেকিন
- কিং ডাক
এই জাতের হাঁস দ্রুত বাড়ে এবং মাংসের পরিমাণ বেশি। এদের মাংসের স্বাদ ও গুণমান ভালো।
হাঁসের রোগের ঔষধ pdf
আরো পড়ুনঃ আজকের স্বর্ণের দাম কত বাংলাদেশে