আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আজকে আপনাদেরকে জানাবো এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত তা সম্পর্কে। তো চলুন শুরু করা যাক।
এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত
এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত জেনে নিন। এশার নামাজ মোট ১৫ রাকাত।
- চার রাকাত সুন্নত
- চার রাকাত ফরজ
- দুই রাকাত সুন্নত
- দুই রাকাত নফল
- তিন রাকাত বিতর
এশার নামাজ এর নিয়ত
এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজের আরবি নিয়ত হলো:
توی ان صلى الله تعالى اربع ركعات صلوة العشاء ته رسول الله تعالی متوجها الى جهة الكعبة الشريفة
الله أكبرনাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, আরবায়া রাকাআতি সালাতিল ঈশাই সুন্নতুন রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
বাংলা অনুবাদ:
আমি কেবলামুখী হয়ে এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।
এই নিয়তটি মনে মনে বা উচ্চারণ করে পড়া যায়। নিয়ত করার পর, “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করতে হবে। আপনি এই কলাম থেকে এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত জেনে গেছেন।
এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ম হলো:

এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত এবং এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ম জেনে নিন।
- প্রথমে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে।
- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়তে হবে।
- দ্বিতীয় রাকাতে রুকু ও সিজদা করার পর, “আত্তহিয়্যাতু” পড়ার পর, “সালাম” না বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
- এরপর আরেকটি দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে।
- এই দুই রাকাতেও প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়তে হবে।
- দ্বিতীয় রাকাতে রুকু ও সিজদা করার পর, “আত্তহিয়্যাতু” পড়ার পর, “সালাম” বলে নামাজ শেষ করতে হবে।
এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজের ফজিলত অনেক। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার ফরজ নামাজের পর চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে, সে যেন সারা রাত নামাজ পড়ে।”
এশার চার রাকাত ফরয নামাজের আরবি নিয়ত
নিয়ত:
اَللهُمَّ اِنِّيْ نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّيَ صَلَاةَ الْعِشَاءِ اَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالٰى، مُوَجِّهًا وَجْهِيَ لِلْقِبْلَةِ اَدَاءً لِلّٰهِ تَعَالٰى.
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য এশার চার রাকাত ফরয নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি। কেবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি নাওয়াইতু আন উয়ুদিয়্যা ছালাতাল ইশায়ি আরবা’ রাকাআতিন ফারদ্বন লিল্লাহি তাআলা, মুওয়াজ্জিহান ওয়াজহিই লিলকিবলাতে আদিয়ান লিল্লাহি তাআলা।
নিয়তের বাংলা অনুবাদ:
আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে এশার চার রাকাত ফরয নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি। কেবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।
নিয়ত করার সময় লক্ষণীয় বিষয়:
এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত এবং নিয়ত করার সময় লক্ষণীয় বিষয় জেনে নিন।
- নিয়ত মনে মনে করাই উত্তম, তবে মুখে উচ্চারণ করলেও জায়েয।
- নিয়তে ফরয, সুন্নত, নফল ইত্যাদি নামাজের নাম উল্লেখ করা জরুরি।
- নিয়তে নামাজের রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করা জরুরি।
- নিয়তে নামাজের উদ্দেশ্য উল্লেখ করা জরুরি।
- নিয়তে কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা জরুরি।
- নিয়ত করার সময় মনে মনে আল্লাহর কাছে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নামাজ পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা জরুরি।
এশার নামাজ কয়টায়
এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত এবং এশার নামাজ কয়টায়। আপনার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে নামাজের সময় আলাদা হতে পারে। তাই আপনার উচিত হবে নিয়মিত আপডেট জেনে নেওয়া।
এশার নামাজের নিয়ম ও দোয়া
এশার নামাজের নিয়ম
- নিয়ত:
নিয়ত করছি আল্লাহর পক্ষ থেকে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার।
- তাকবির তাহরিমা:
আল্লাহু আকবার।
- কায়মা:
আল্লাহু আকবার।
- সুরা ফাতিহা পড়া:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আর-রহমানির রহিম। মালিকি ইয়াউমিদ্দিন। ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যাকানাস্তাইঈন। ইহদিনাস-সিরাতাল মুস্তাকীম। সিরাতাল লাযিনা আন’আমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দোল্লীন।
- রুকু:
আল্লাহু আকবার।
- সিজদা:
আল্লাহু আকবার।
- দুই সিজদার মাঝে বসা:
আল্লাহু আকবার।
- দ্বিতীয় সিজদা:
আল্লাহু আকবার।
- আদায়:
আল্লাহু আকবার।
- দ্বিতীয় রাকাত শুরু:
আল্লাহু আকবার।
- সুরা ফাতিহা পড়া:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আর-রহমানির রহিম। মালিকি ইয়াউমিদ্দিন। ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যাকানাস্তাইঈন। ইহদিনাস-সিরাতাল মুস্তাকীম। সিরাতাল লাযিনা আন’আমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দোল্লীন।
- রুকু:
আল্লাহু আকবার।
- সিজদা:
আল্লাহু আকবার।
- দুই সিজদার মাঝে বসা:
আল্লাহু আকবার।
- দ্বিতীয় সিজদা:
আল্লাহু আকবার।
- সালাম ফিরান:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
এশার নামাজের দোয়া
এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত এবং এশার নামাজের কিছু দোয়া নিচে দেওয়া হলোঃ
- তাশাহহুদ:
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকাহ লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।
- দরুদ শরিফ:
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
- দোয়া মাসুরা:
উচ্চারণ: রাব্বিগফিরলি ওয়া ওয়ারদহানি ওয়া ঝাকফিনি, ওয়া আ’ফিনি, ওয়া আহ-হিনি, ওয়া আরফিকনি, ওয়া আজিরনি মিনাল গারি।
অর্থ: হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর, আমাকে পরিপূর্ণতা দান কর, আমাকে সুস্থতা দান কর, আমাকে হিদায়াত দান কর, আমাকে জ্ঞান দান কর, এবং আমাকে অভাব থেকে রক্ষা কর।
এশার নামাজের সূরা
এশার নামাজের ফরজ চার রাকাত। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক। এরপর অন্যান্য সুরা পড়া ওয়াজিব। সুন্নাত হলো, প্রতি রাকাতে দুটি সুরা মিলিয়ে পড়া। এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত এবং এশার নামাজের সূরা জেনে নিন।
এশার নামাজের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সুরা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে নবী করিম (সা.) এশার নামাজে সুরা তারিক, সুরা মুজজাম্মিল, সুরা মুদ্দাসসির, সুরা আদ-দুহা, সুরা আল-আসর, সুরা আলাম নাশরাহ, সুরা আল-গাসিয়াহ, সুরা আত-তীন, সুরা আল-আলা, সুরা আল-কাউসার, সুরা আল-ক্বাফ, সুরা আল-মাআরিজ, সুরা নজম, সুরা আল-আনকাবুত, সুরা আর-রূম, সুরা আল-ইয়াসীন, সুরা আস-সাফফাত, সুরা সাফ, সুরা যুমার, সুরা মুহাম্মদ, সুরা আল-ফাতহ, সুরা আল-হাজ্জ, সুরা আল-মুমতাহিনা, সুরা আল-আনফাল, সুরা মুনাফিকুন, সুরা আল-তওবা, সুরা আলে-ইমরান, সুরা আল-বাকারা, সুরা আল-আরাফ, সুরা আন-নিসা, সুরা ইউসুফ, সুরা হুদ, সুরা ইব্রাহিম, সুরা ইসরা, সুরা তওবা, সুরা আন-নাহল, সুরা আল-ইমরান, সুরা আল-বাকারা থেকে সুরা মুদ্দাসসির পর্যন্ত বিভিন্ন সুরা পড়তেন।
এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত, এশার নামাজ কয়টায় এবং এশার নামাজের জন্য কিছু সুন্নত সুরার উদাহরণ হলো:
- ফরজ প্রথম রাকাতে: সুরা তারিক, সুরা মুজজাম্মিল, সুরা মুদ্দাসসির, সুরা আদ-দুহা, সুরা আল-আসর
- ফরজ দ্বিতীয় রাকাতে: সুরা আলাম নাশরাহ, সুরা আল-গাসিয়াহ, সুরা আত-তীন, সুরা আল-আলা, সুরা আল-কাউসার
- ফরজ তৃতীয় রাকাতে: সুরা আল-মাআরিজ, সুরা নজম, সুরা আল-আনকাবুত, সুরা আর-রূম, সুরা আল-ইয়াসীন
- ফরজ চতুর্থ রাকাতে: সুরা আস-সাফফাত, সুরা সাফ, সুরা যুমার, সুরা মুহাম্মদ, সুরা আল-ফাতহ
এশার নামাজের সুন্নত দুই রাকাত। এই দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ছাড়াও অন্য কোনো সুরা পড়া ওয়াজিব। এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত এবং সুন্নত সুরার জন্যও নবী করিম (সা.) বিভিন্ন সুরা পড়তেন। কিছু সুন্নত সুরার উদাহরণ হলো:
- প্রথম রাকাতে: সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস
- দ্বিতীয় রাকাতে: সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস
এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত এবং এশার নামাজের পর নফল নামাজের জন্যও কিছু সুন্নত সুরা রয়েছে। এগুলো হলো:
- প্রথম রাকাতে: সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস
- দ্বিতীয় রাকাতে: সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস
এশার নামাজের জন্য পড়া সুরার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে নবী করিম (সা.) যেসব সুরা পড়তেন সেগুলো পড়া সুন্নত।
উপসংহার
আমি আশা করছি আপনি হয়তো এশার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত সম্পর্কে যা জানার ছিলো জেনে গেছে। আপনাদের যদি আরো কিছু জানার থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল অর্থ কি