তাহাজ্জুদ নামায হল রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পড়া নামাজ। আরবিতে “তাহাজ্জুদ” শব্দের অর্থ হল “জাগরণ”। শরিয়তের পরিভাষায়, রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয় তা-ই ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’ বা তাহাজ্জুদ নামাজ। আজকে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ সম্পর্কে জানবো।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাতুল মুআক্কাদা বা নফল ইবাদত। অর্থাৎ, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ওয়াজিব নয়, তবে পড়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত পড়তেন এবং সাহাবাদেরকেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত হল রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। অর্থাৎ, রাতের দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত করে পড়া হয়। তবে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত ইচ্ছা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। সর্বোচ্চ ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হল অন্যান্য নামাজের মতোই। তবে তাহাজ্জুদ নামাজে কেরাত যথাসম্ভব লম্বা করা উচিত। রুকু ও সেজদাও যথাসম্ভব লম্বা করা উচিত। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অনেক। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মাফ করেন, বান্দার দুআ কবুল করেন, বান্দার রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং বান্দাকে জান্নাতে দাখিল করেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবী
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জুদ নামায শুরু হয় মধ্যরাতের পর অথবা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়ে গেলে। রাত দুইটার পর ফজরের নামাজের সময় শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাহাজ্জুদ করা হয়। যখন সাহরীর সময় শেষ হয় এবং ফজরের সময় শুরু হয় তখন তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ ছবি
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
- শুরু করার জন্য প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়।
- দাঁড়িয়ে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতে হবে।
- তারপর উভয় হাত হাঁটুতে রেখে আল্লাহর সামনে সিজদা দিয়ে প্রার্থনা চলতে থাকে।
- এরপর, সর্বশক্তিমানের প্রতি সম্পূর্ণ অঙ্গীকার নিয়ে, হাতের তালু, নাক এবং কপাল পৃথিবী স্পর্শ করে মাটির দিকে মুখ করুন।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা, অর্থাৎ নফল। তবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। নবী করিম (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং নিজেও তা পড়েছেন। তিনি বলেছেন, “তাহাজ্জুদ হলো নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।” (মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বনিম্ন রাকাত সংখ্যা হলো দুই। তবে নবী করিম (সা.) কখনো কখনো চার, ছয়, আট, দশ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছেন। উত্তম হলো আট রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। এরপর বিতর নামাজ পড়া।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হলো, দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া। এ নামাজের রাকাত সংখ্যা সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়া জায়েজ আছে।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অনেক। এ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়, গুনাহ মাফ হয়, নেকির পাল্লা ভারী হয় এবং জান্নাতের সুখ লাভ হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ নিয়ত
“আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত নফল নামাজের নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।”
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। দুই রাকাত থেকে শুরু করে যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যায়। হযরত মুহাম্মদ (সা.) কখনও দুই রাকাত, কখনও চার রাকাত, কখনও ছয় রাকাত, কখনও আট রাকাত এবং কখনও দশ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দু রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, সে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করল।”
তাই তাহাজ্জুদ নামাজে কমপক্ষে দুই রাকাত পড়া উচিত। আর বেশি পড়া হলে তাতে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হলো, অন্যান্য নামাজের মতোই। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের ফরজ রাকাত নেই। সুতরাং তাহাজ্জুদ নামাজে দুই রাকাত করে নামাজ পড়া ভালো।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হলো, মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে। রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত।
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
১। ওযু বা গোসল করে পবিত্র হয়ে নিন।
২। নিয়ত করুন, “আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের নিয়ত করছি, আল্লাহু আকবার।”
৩। সূরা ফাতেহা পড়ুন।
৪। যে সূরা পড়তে চান, পড়ুন।
৫। রুকু করুন।
৬। রুকু থেকে ওঠুন।
৭। সেজদা করুন।
৮। দু’টি সেজদার মাঝখানে বসে তাশাহহুদ পড়ুন।
৯। আবার সেজদা করুন।
১০। বসে তাশাহহুদ পড়ুন।
১১। ডান হাত দিয়ে নাকের ডগা স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে নিন।
১২। দ্বিতীয় রাকাতের জন্য সূরা ফাতেহা পড়ুন।
১৩। যে সূরা পড়তে চান, পড়ুন।
১৪। রুকু করুন।
১৫। রুকু থেকে ওঠুন।
১৬। সেজদা করুন।
১৭। দু’টি সেজদার মাঝখানে বসে তাশাহহুদ পড়ুন।
১৮। আবার সেজদা করুন।
১৯। বসে তাশাহহুদ পড়ুন।
২০। সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করুন।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদত করা। এটি একটি নফল নামাজ, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি: ১১৫৩)
তাহাজ্জুদ নামাজের আরও কিছু ফজিলত নিম্নরূপ:
- তাহাজ্জুদ নামাজ গোনাহের কাফফারা।
- তাহাজ্জুদ নামাজ দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।
- তাহাজ্জুদ নামাজ ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তোলে।
- তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি উপায়।
- তাহাজ্জুদ নামাজ শরীর ও মনকে সতেজ ও শান্ত রাখে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়
তাহাজ্জুদের আগে ও পরে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা বাঞ্ছনীয়। এ সময় সূরা মুজাম্মিল, সূরা মুদ্দাশির, সূরা মুলক, সূরা ওয়াকিয়া, সূরা দুখান, সূরা আর রহমান, সূরা ইয়াসিন, সূরা হাশর, সূরা কাহফসহ অন্যান্য সূরা পাঠ করা বরকতময় ও ফলদায়ক। এটি দুআ কবুলের উত্তম সময়। রমজান জুড়ে তাহাজ্জুদ করা সহজ।
আরো পড়ুনঃ কাজা নামাজের নিয়ত