মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি
মূল্যস্ফীতি বলতে বোঝায় পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়াকে। সাধারণত পণ্য/সেবার দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐ পণ্য/সেবা ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন হয় কিংবা একই পরিমাণ মুদ্রায় কোনো পণ্য/সেবা কিনতে গেলে আগের চেয়ে পরিমাণে কম পাওয়া যায়।
মুদ্রাস্ফীতি বলতে বোঝায় মুদ্রার মূল্য হ্রাস পাওয়াকে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের চেয়ে কম পণ্য/সেবা কেনা যায়।
মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বলতে সাধারণত পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি বোঝানো হয়, আর মুদ্রাস্ফীতি বলতে মুদ্রার মূল্য হ্রাস বোঝানো হয়।মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি
মূল্যস্ফীতির কারণ
মূল্যস্ফীতির বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো:
- বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি
- জ্বালানি ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা
- অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাহিদা বৃদ্ধি
- অর্থনীতিতে মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি
মুদ্রাস্ফীতির কারণ
মুদ্রাস্ফীতিরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো:
- অর্থনীতিতে মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি
- অর্থনীতিতে চাহিদার তুলনায় পণ্য ও সেবার সরবরাহ কম
- অর্থনীতিতে মূল্য স্থিরকরণ নীতির ব্যর্থতা
মূল্যস্ফীতির প্রভাব
মূল্যস্ফীতির বিভিন্ন প্রভাব হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাবগুলো হলো:
- ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায়
- সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়
- ব্যবসায়ীদের মুনাফা কমে যায়
- বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়
মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব
মুদ্রাস্ফীতিরও বিভিন্ন প্রভাব হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাবগুলো হলো:
- মূল্যস্ফীতির ফলে একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের চেয়ে কম পণ্য/সেবা কেনা যায়
- মুদ্রাস্ফীতির ফলে ঋণের মূল্য বৃদ্ধি পায়
- মুদ্রাস্ফীতির ফলে বিনিয়োগ হ্রাস পায়
মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো:
- বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা
- জ্বালানি ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করা
- অর্থনীতিতে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা
- অর্থনীতিতে মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করা
মুদ্রাস্ফীতি কিভাবে পরিমাপ করা হয়
মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ সূচক হলো কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (CPI)। CPI একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার দামের গড় পরিবর্তন পরিমাপ করে। CPI-এর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয়।মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি
CPI গণনা করার জন্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার দামের গড় পরিবর্তন নির্ণয় করা হয়। এই পরিবর্তনকে শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়। এই শতকরা হারই হলো মুদ্রাস্ফীতির হার।
CPI গণনা করার জন্য, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারী সংস্থা দায়ী থাকে। বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক CPI গণনা করে।মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি
CPI ছাড়াও মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করার জন্য আরও কিছু সূচক ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স (WPI)
- বেসরকারি খরচের মূল্য সূচক (Private Consumption Expenditure Index, PCE)
- নিট এক্সপোর্ট প্রাইস সূচক (Net Export Price Index)
- নিট আমদানি প্রাইস সূচক (Net Import Price Index)
এই সূচকগুলো CPI-এর মতোই পণ্য ও সেবার দামের গড় পরিবর্তন পরিমাপ করে। তবে এই সূচকগুলো বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর জোর দেয়। উদাহরণস্বরূপ, WPI শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের দামের পরিবর্তন পরিমাপ করে। PCE ব্যক্তিগত খরচের মূল্য পরিবর্তন পরিমাপ করে।
মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করার জন্য কোন সূচক ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে উদ্দেশ্যের উপর। সাধারণত, CPI মুদ্রাস্ফীতির হার পরিমাপ করার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সূচক।
মুদ্রাস্ফীতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো:
- মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা
মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ হলো অর্থনীতিতে মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি। তাই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি
- চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা
অর্থনীতিতে চাহিদার তুলনায় পণ্য ও সেবার সরবরাহ কম হলেও মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে। তাই চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করাও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বিভিন্ন কর ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
- বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি পেলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশে পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পায়। তাই বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখাও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি
- জ্বালানি ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা
জ্বালানি ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। ফলে পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি পায়। তাই জ্বালানি ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করাও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করা
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পায়। তাই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করাও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন একটি পদক্ষেপই পর্যাপ্ত নয়। বিভিন্ন পদক্ষেপের সমন্বয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি