বিজ্ঞানের জনক কে?
বিজ্ঞানের জনক বলতে কে বোঝায় তা নির্ভর করে “বিজ্ঞান” শব্দটির সংজ্ঞা কী তা নির্ভর করে। যদি বিজ্ঞানকে “প্রাকৃতিক বিশ্বের ঘটনার বর্ণনা ও ব্যাখ্যার একটি সিস্টেম” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তাহলে থেলিসকে বিজ্ঞানের জনক হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। থেলিস ছিলেন একজন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বাস করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত জিনিস একক প্রাথমিক উপাদান থেকে উদ্ভূত হয়, যা তিনি “জল” বলে চিহ্নিত করেছিলেন। থেলিসের এই ধারণাটি প্রাকৃতিক বিশ্বের ঘটনাগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছিল যা পর্যবেক্ষণ ও যুক্তির উপর ভিত্তি করে ছিল।
অন্যদিকে, যদি বিজ্ঞানকে “পরীক্ষামূলক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে প্রাকৃতিক বিশ্বের অধ্যয়ন” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তাহলে গ্যালিলিওকে বিজ্ঞানের জনক হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। গ্যালিলিও ছিলেন একজন ইতালীয় পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, প্রকৌশলী, গণিতবিদ এবং দার্শনিক যিনি খ্রিস্টপূর্ব ১৭শ শতাব্দীতে বাস করতেন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিশ্বের ঘটনাগুলি অধ্যয়নের নতুন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছিলেন। গ্যালিলির আবিষ্কারগুলি, যেমন তত্ত্ব যে সূর্যই আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র, প্রাকৃতিক বিশ্বের বিষয়ে পূর্বের বিশ্বাসগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বিজ্ঞানের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
অবশেষে, বিজ্ঞানের জনক হিসাবে যে ব্যক্তিকে বিবেচনা করা উচিত তা নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির উপর। যাইহোক, থেলিস এবং গ্যালিলিও উভয়ই বিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং তাদেরকে বিজ্ঞানের জনক হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
বিজ্ঞানে থেলিস এর কি অবদান ছিলো?
থেলিসকে প্রাচীন গ্রিসের গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা এবং দর্শনের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি প্রাকৃতিক বিশ্বের ব্যাখ্যার জন্য যুক্তি ব্যবহার করার প্রথম গ্রিক দার্শনিক ছিলেন। তার অবদানগুলি বিজ্ঞানের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং সেগুলি আজও অনুরণিত হয়।
থেলিসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে রয়েছে:
- জ্যামিতিতে: তিনি বৃত্তের ব্যাস দ্বারা সমদ্বিখণ্ডিত হয়, সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান সমান বাহুগুলোর বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান, এবং অর্ধবৃত্তস্থ কোণের পরিমাণ এক সমকোণ ইত্যাদি উপপাদ্য প্রমাণ করেন।
- জ্যোতির্বিদ্যায়: তিনি সূর্যগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং পিরামিডের উচ্চতা পরিমাপ করার জন্য ছায়ার ব্যবহার করেন।
- দর্শনে: তিনি বিশ্বের একমাত্র মৌলিক উপাদান হল জল বলে দাবি করেন।
থেলিসের জ্যামিতিতে অবদানগুলি বীজগণিতের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে। তিনিই প্রথম দেখান যে একটি বিন্দু নির্দিষ্ট শর্তাধীনে চলমান হয়ে জ্যামিতিক সঞ্চারপথ তৈরি করে। থেলিসের জ্যোতির্বিদ্যায় অবদানগুলি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলিকে ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করে। থেলিসের দর্শনের অবদানগুলি প্রাকৃতিক বিশ্বের জন্য একটি যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদানের প্রচেষ্টার সূচনা করে।
বিজ্ঞানে গ্যালিলিও এর কি অবদান ছিলো?
গ্যালিলিও গ্যালিলেই ছিলেন একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক। তাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
গ্যালিলিওর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে:
- দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি সাধন: গ্যালিলিওর আগের দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলি খুবই দুর্বল ছিল। গ্যালিলিও এই যন্ত্রগুলির উন্নতি সাধন করে সেগুলিকে অনেক শক্তিশালী করে তোলেন। এর ফলে তিনি চাঁদের উপরিভাগ, বৃহস্পতির উপগ্রহ, শুক্রের পর্যায় এবং শনির বলয়ের মতো বহু নতুন এবং অপ্রত্যাশিত জিনিস দেখতে পেরেছিলেন।
- কোপারনিকাসের মতবাদের সমর্থন: গ্যালিলিও কোপারনিকাসের মতবাদকে সমর্থন করেন যে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। এই মতবাদটি তৎকালীন ধারণাগুলির বিপরীত ছিল, যা বলেছিল যে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। গ্যালিলিওর পর্যবেক্ষণগুলি কোপারনিকাসের মতবাদকে সমর্থন করেছিল, কিন্তু এটি গির্জার সাথে তার বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- গতির সূত্র আবিষ্কার: গ্যালিলিও গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র আবিষ্কার করেন। এই সূত্রগুলি বলবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
- পতনশীল বস্তুগুলির গতির গবেষণা: গ্যালিলিও পতনশীল বস্তুগুলির গতির গবেষণা করেছিলেন। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে সমস্ত বস্তু, তাদের ভরের উপর নির্ভর না করে, একই হারে পতিত হয়।
গ্যালিলিওর অবদানগুলি বিজ্ঞানের বিকাশে অমূল্য ছিল। তিনি বিশ্বকে আমাদের কাছে যেভাবে দেখি তার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ রসায়নের জনক কে