আজকে আমরা তওবা করার দোয়া সম্পর্কে জানবো। তওবা করার জন্য অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও প্রচলিত দোয়া হলো:
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতা’তু। আউযু বিকা মিন শাররি মা ছনাতু। আবুউ লাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ বি-জাম্বি, ফাগফির লি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ-জুনুবা ইল্লা আন্তা।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আপনিই আমার রব, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আমার শক্তি অনুযায়ী আপনার ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার দেওয়া সকল নেয়ামত স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন না।
এই তওবা করার দোয়াটি সকল ধরনের গুনাহের জন্য পড়া যায়। এটি পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।
তওবা করার জন্য আরেকটি দোয়া হলো:
আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুমু, ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ:
আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বশক্তিমান। আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।
এই দোয়াটিকে “সায়্যিদুল ইস্তিগফার” বলা হয়। এই দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তায়ালা বান্দার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
তওবা করার দোয়া

তওবা করার দোয়াটি হলোঃ ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু, ওয়া আতুবু ইলাইহি। ‘ অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নাই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন; এবং আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। (তিরমিজি, আবু দাউদ)।
তওবা করার নিয়ম
তওবা হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাঁর নির্দেশাবলী মেনে চলার দৃঢ় সংকল্প করা। তওবা করার তিনটি শর্ত রয়েছে:
- পাপ থেকে বিরত থাকা: তওবার প্রথম শর্ত হলো পাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা। অর্থাৎ, যে কাজটি করা পাপ, সেই কাজটি ভবিষ্যতে আর করা যাবে না।
- পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া: তওবার দ্বিতীয় শর্ত হলো পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। অর্থাৎ, পাপ করে নিজের ভুল বুঝতে পারা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য মন থেকে অনুতপ্ত হওয়া।
- পাপ না করার দৃঢ় সংকল্প করা: তওবার তৃতীয় শর্ত হলো পাপ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। অর্থাৎ, পাপ না করার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং ভবিষ্যতে পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
এছাড়াও, যদি পাপটি অন্য কারো হক লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাওয়াও তওবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তওবা করার কিছু সুন্নত নিয়ম হলো:
- সুন্দরভাবে ওজু করা: তওবা করার আগে সুন্দরভাবে ওজু করা।
- দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া: তওবা করার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া।
- আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দোয়া করা: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়া:
আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাকতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদাইকা মাস্তাতাতু, আউযু বিকা মিন শাররি মা সানাতু, আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বী, ফাগফিরলি, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
অর্থ:
হে আল্লাহ, তুমিই আমার প্রভু, তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা এবং আমি তোমার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি যথাসাধ্য পালন করার চেষ্টা করছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি তোমার নিকট তোমার অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ এবং আমি আমার পাপের জন্য অনুতপ্ত। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি ছাড়া অন্য কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।
তওবা করার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
তওবা করার জন্য অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত দোয়া হল সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার। এই দোয়াটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য সবচেয়ে উত্তম দোয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বী, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাক্তানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আ’ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা’তু, আবূউ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া, ওয়া আবূউ লাকা বিযুনবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি আমার রব, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো, আর আমি তোমার বান্দা। আমি যথাসাধ্য তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রতি তোমার নেয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি, আর আমি আমার অপরাধের স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
তওবা করার দোয়া আরবি
তওবা করার দোয়া জন্য দুটি উল্লেখযোগ্য:
- প্রথম দোয়া:
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল আজিমাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ: “আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর কাছে তাওবা করি।”
- দ্বিতীয় দোয়া:
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
উচ্চারণ: “রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম।”
অর্থ: “(হে আমার) রব! আমাকে মাফ করুন; আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী পরম দয়াময়।”
এই দুটি দোয়া ছাড়াও, যেকোনোভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া যায়। তবে, তওবা করার জন্য প্রয়োজনীয় হলো:
- গোনাহের জন্য অনুশোচনা করা।
- গোনাহ থেকে ফিরে আসা।
- গোনাহের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, যদি তা সম্ভব হয়।
- আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করা যে, ভবিষ্যতে আর কখনো সেই গোনাহ করা হবে না।
তওবা করার জন্য শুধুমাত্র দোয়া পড়াই যথেষ্ট নয়। দোয়ার পাশাপাশি, উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ করাও জরুরি।
তওবা করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া
তওবা করার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়:
- পাপের জন্য অনুশোচনা ও লজ্জাবোধ করা: তওবাকারীকে অবশ্যই তার পাপের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। তার মনের মধ্যে পাপের প্রতি ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা জন্মাতে হবে।
- পাপের প্রতি অন্তরে দৃঢ় সংকল্প করা: তওবাকারীকে অবশ্যই পাপ থেকে বিরত থাকার এবং ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।
- পাপের ক্ষমা চাওয়া: তওবাকারীকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে পাপের ক্ষমা চাইতে হবে।
তওবা করার দোয়া
তওবা করার জন্য অনেক দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো:
আসতাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি; লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে আমার সব পাপের জন্য ক্ষমা চাই, আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বাঁচার ও নেক কাজ করার কোনোই শক্তি নেই।
এই দোয়াটি পড়ার পাশাপাশি তওবাকারীকে নিজের পাপের জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। তার মনের মধ্যে পাপের প্রতি ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা থাকতে হবে। এবং ভবিষ্যতে পাপ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।
তাওবার ফজিলত
আল্লাহ তা’আলা তওবাকারীদের খুবই ভালোবাসেন। তিনি তওবাকারীদের গুনাহ মাফ করে দেন এবং তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“হে যারা ঈমান এনেছো, তোমরা যদি আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, তাহলে তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের আমলসমূহের মধ্যে উত্তম স্থানে প্রবেশ করাবেন।” (সূরা তাওবা, আয়াত: ৭)
“আল্লাহ তা’আলা তওবাকারীদের খুবই ভালোবাসেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ২০৭)
তাওবার গুরুত্ব
মানুষ মাত্রই ভুল করে। সবাইকেই পাপ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, সে যেকোনো ধরনের পাপ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাওবা করা। তওবা করলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই গুনাহ মাফ করে দেবেন।
তাওবা হলো একজন মুসলিমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি একজন মুসলিমের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। তওবা করলে একজন মুসলিম তার পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে পারে।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়া বাংলা
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়া হলো একটি ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া। এই দোয়াটিতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এই দোয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দোয়াটির অনেক ফজিলত রয়েছে।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়ার বাংলা উচ্চারণ:
আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু, ওয়া আতুবু ইলাইহি।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়ার বাংলা অর্থ:
আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন। এবং আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলত:
- এই দোয়াটি পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলা গুনাহ মাফ করে দেন।
- এই দোয়াটি পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
- এই দোয়াটি পাঠ করলে মনের প্রশান্তি ও শান্তি লাভ করা যায়।
- এই দোয়াটি পাঠ করলে দুনিয়ার কষ্ট ও বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- এই দোয়াটি পাঠ করলে জান্নাতের পথ সহজ হয়।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়াটি কখন পাঠ করা যায়?
- এই দোয়াটি যেকোনো সময় পাঠ করা যায়।
- বিশেষ করে ফরজ নামাজের পর, শুক্রবারের রাতে, জুমার দিনের ফজরের নামাজের পর, রজব ও শাবান মাসে, রমজানের শেষ দশকে, লাইলাতুল কদরের রাতে এই দোয়াটি পাঠ করা ভালো।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়াটি কীভাবে পাঠ করতে হয়?
- এই দোয়াটি মনে মনে বা জোরে পাঠ করা যায়।
- দোয়াটি পাঠ করার সময় মনের ভেতরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আন্তরিকতা থাকতে হবে।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করার চেষ্টা করা উচিত। এই দোয়াটি পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং দুনিয়ার কষ্ট ও বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ